মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার বিদায় হজের ভাষণে বলেছিলেন, “তোমরা তোমাদের ক্রীতদাস-দাসীদের সাথে ভাল আচরন কর, তোমরা যা খাও তাদেরকে তা খেতে দাও। যা পড়, তাদেরকে তা পড়তে দাও।”
আজকের এই সমাজে দাড়িয়ে আমরা ঠিক কতজন মানুষ এই কথা মানি? খাওয়া, পড়া তো অনেক দূরের ব্যাপার, ভাল আচরণই আমরা কয়জন করে থাকি? আজকের এই লেখার মূল কারন সব দাস- দাসীদের নিয়ে নয়, শুধু শিশু শ্রমিকদের নিয়ে!
একটা কথা আমি ছোটকাল থেকে বিশ্বাস করি, একটা বাচ্চাকে দেখার পরেও যার মনে মায়া-দয়া, ভালবাসার জন্ম হয়না, তার মন- মানসিকতা কোন সুস্থ পর্যায়ের হতে পারেনা।
বাচ্চা মনতো নির্মল, পবিত্র। তাদের মধ্যে নাকি আল্লাহর রহমত থাকে। আল্লাহ নিজেই বাচ্চাদের উপরে অনেক খুশি। তাহলে মানুষ হয়ে কেমন করে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারি? ছোট থেকেই শিশু শ্রমকে খুব বেশি ঘৃণা করি, কোন যুক্তি দিয়ে কখনো ব্যাপারটি আমি মানতে পারিনা। খুব কান্না পায় যখন কোন বাচ্চার উপরে নির্যাতন হতে দেখি, কোন বাচ্চাকে কষ্ট পেতে দেখি।
শিশু শ্রম বর্তমান সময়ের আলোচিত সমস্যা। যত বেশি দিন যাচ্ছে দুনিয়া তত বেশি প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে, উন্নত হচ্ছে। ঠিক ততটাই মানুষের মন সংকীর্ণ হচ্ছে, বিবেকের অবনতি হচ্ছে যা প্রতিনিয়ত দৃশ্যমান।
বাংলাদেশের মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। অনেক অঞ্চল আছে যাদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। অধিকাংশ পরিবার হতদরিদ্র, সেসব পরিবারের ছেলে মেয়েদের তাদের বাবা মা কাজে পাঠাচ্ছে, বিশেষ করে বাসাবাড়িতে। আর তাদের পেয়ে আমরা সভ্য সমাজের ধনী লোকেরা হয়ে উঠছি একেক জন অতীত কালের বর্বর মনিভ, যারা তাদের ক্রীতদাস – দাসীদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালাতে পছন্দ করতেন।
শুধুমাত্র দু’বেলা দু মুঠো ভাত খাবার জন্য এসব সহ্য করছে এই গরীব, অসহায় বাচ্চারা। কিন্তু দু’বেলা দু মুঠোই বা ওরা কি খাচ্ছে? যেখানে পরিবারের বাচ্চা গুলো প্রতিনিয়ত মুখরোচক খাবার খেয়ে যাচ্ছে, আর গরীব বাচ্চা গুলো চোখের সামনে অপলক ভাবে তা দেখছে। কিছু বলতে পারেনা, বলার তো প্রশ্নেই আসেনা। কপালে তো অত্যাচার ছারা কিছুই জুটবেনা তখন। আবার মুখ ফুটে খাবার চাইতেও পারেনা। মনে মনে কষ্ট পায় আর হয়ত দোষ দেয় নিজের অদৃষ্টকে, আর সাথে থাকে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস। আচ্ছা ওদের এই দীর্ঘ নিঃশ্বাস কী কোন দাম নেই?
আচ্ছা আমরা এটা যখন ভাবতে পারি, এই ছোট বাচ্চা একজন বড় মানুষের মত করে কাজ করতে পারে, তাহলে এটা কেন ভাবতে পারিনা যে, শুয়ে বসে আর কম্পিউটার গেমস খেলে অবসর সময় কাটানো আমাদের ননীর পুতুলদের থেকে এই বাচ্চা দের ভাল ভাল খাবার দেয়া দরকার।
আজকাল দেখা যায়, কাজের মেয়েদের রেস্তোরায় এ নিয়ে গিয়ে বসিয়ে রেখে দামী- দামী খাবার খাওয়া হয় আর ওরা তাকিয়ে থাকে! এ কোণ ধরণের সভ্যতা? কোথায় বাস করছি আমরা? এ কেমন আধুনিকতা নিয়ে আমরা গর্ব করি? রিক্সায় বাড়ির লোক শপিং নিয়ে বসার পর কাজের মেয়ের জায়গা হয়না, তাকে রিক্সার পিছনে ঝুলে ঝুলে বাসায় আসতে হয়!
কেন অন্য একটা রিক্সার ব্যবস্থা করা যায়না? কেন তাদের এইভাবে অবজ্ঞা করা হয়ে থাকে? তাদের জীবনের কি কোন মূল্য থাকেনা? বাচ্চাদের গরীব বাবা মা অভাবের তাড়নায় তাদের কাজ করতে পাঠায়। বিক্রি তো করে দেয়না।
আজকাল এই সভ্য সমাজে যখন সামান্য বেতন বা সামান্য কিছু তাকা, খাবার চাওয়ার জন্য এইসব গরীব বাচ্চাদের মার খেতে দেখতে হয়, যখন দেখি সভ্য সমাজের অনেক উচ্চ পদে কর্মরত কোন ব্যক্তির পরিবার এই ধরনের বাচ্চাদের উপর অমানসিক অত্যাচার চালায়, তখন ধিক্কার আসে নিজের উপরে, এই দেশের উপরে, গোটা সমাজ ব্যবস্থার উপরে। ওই সব বাচ্চাদের ভালো থাকার, ভালো পোশাক পড়া, পড়াশোনা করার, ভাল ব্যবহার পাবার অধিকার আছে।
সবাই যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে ওদের প্রতি সদয় হয়, ওদের ভালবাসে, ওদের অধিকার ওদের বুঝিয়ে দেয়, পর্যাপ্ত সুযোগ দেয়া হয় তাহলে ওরা একদিন দেশের হাল ধরবে, ওরা বড় হবে, দেশ এগিয়ে যাবে।
“ ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুর অন্তরে”