“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”- পবিত্র কুরআনের সূরা নামলের একটি আয়াত কিংবা অংশবিশেষ। কিন্তু এই বিশেষ আয়াত কুরআনে বারবার পাওয়া যায়।
পবিত্র কুরআনের ১১৪ সূরার মধ্যে শুধুমাত্র সূরা তাওবা ব্যতিত বাকি ১১৩ সূরার শুরুতে এই আয়াত উচ্চারিত হয়ে থাকে। এই আয়াত হচ্ছে অনেক বেশি ফজিলতের।
কুরআনে বারবার এই কথা বলা হয়েছে, যে তোমরা যেকোন কাজ শুরুর আগে বিসমিল্লাহ্ শব্দটি উচ্চারণ করো। রাসূল পাক (সা.) বলেছেন যে, যে কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা হয় না, সেই কাজে বরকত থাকে না।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরীফে ফরমায়েছেন, বিসমিল্লাহ শরীফের মধ্যে ১৯টি হরফ, এ ১৯ হরফের বিশেষত্ব এই যে, দিবারাত্রিতে মোট ২৪ ঘণ্টা। এর মধ্যে পাঁচ ঘণ্টা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য বরাদ্দ।
বাকি ১৯ ঘণ্টা মানুষ কাজকর্ম, চলাফেরা, পানাহার ও নিদ্রায় কাটায়। আল্লাহ তায়ালা ঐ সময়ের মধ্যে এবাদাতের জন্য বিসমিল্লাহকে ঠিক করেছেন। তার বরকতে মানুষ বালা-মসিবত থেকে বেঁচে থাকে। সুতরাং প্রতি ঘণ্টায় ১৯ বার করে বিসমিল্লাহ পাঠ করা উচিত।
রাসূল পাক ইরশাদ করেছেন যে, “যে ব্যক্তি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম তেলাওয়াত করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য ১০ হাজার নেকি লিখেন, ১০ হাজার বদী মার্জনা করেন এবং ১০ হাজার উচ্চ মর্যাদা দান করেন।”
“যে ব্যক্তি কোনো নেক মকসুদ হাসিলের জন্য বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ১২ হাজার বার এভাবে পাঠ করে যে, প্রত্যেক ১ হাজার বার পাঠ করার পর দু’রাকাআত নামাজ আদায় করে দোয়া করবে। এভাবে ১২ হাজার বার পাঠ করে দোয়া করলে, আল্লাহ তাআলার রহমতে ঐ ব্যক্তির মকসুদ পূর্ণ হয়।
অযুর সাথে ১০০ বার বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পাঠ করলে সেই ব্যক্তির লক্ষ বছরের গুনাহ মাফ হবার কথা বলা আছে।
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে- যখন বিসমিল্লাহ শরীফ অবতীর্ণ হয়, তখন তার মর্যাদা ও মহানুভবতার ভয়ে পাহাড় পর্বত কম্পমান হতে থাকে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন- যে ব্যক্তি দোযখ রক্ষী উনিশ জন ফেরেশতার আযাব থেকে মুক্তি পেতে চায়, তার কর্তব্য অধিক সংখ্যকবার বিসমিল্লাহ পাঠ করা। কেননা, বিসমিল্লাহতে উনিশটি বর্ণ। এক একটি বর্ণ পাঠের বরকতে এক একজন ফেরেশতার কঠোর আজাব থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ বর্ণনা করেন, বিসমিল্লাহ যখন নাজিল হয়, তখন মেঘমালা পূর্বদিকে দৌড়াতে লাগল, সাগরগুলো উত্তাল অবস্থায় ছিল, সব প্রাণীজগত নিস্তব্ধভাবে দাঁড়িয়ে শুনছিল, শয়তানকে দূরে বিতাড়িত করা হয়েছিল এবং আল্লাহ তায়ালা নিজ ইজ্জত ও জালালিয়াতের কসম খেয়ে বলেছেন, যে জিনিসের ওপর বিসমিল্লাহ পড়া হবে, ঐ জিনিসে অবশ্যই বরকত দান করব। (তাফসিরে মারদুওয়াই)
হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, কোন ব্যক্তি যদি পায়খানায় প্রবেশকালে বিসমিল্লাহ পড়ে, তবে জিন ও শয়তানদের দৃষ্টি ঐ ব্যক্তির গুপ্তাঙ্গ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। (তিরমিজি)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে খাদ্যে বিসমিল্লাহ পড়া হয় না, সে খাদ্যে শয়তানের অংশ থাকে। (মুসলিম)
তাফসিরে কবিরে উল্লেখ করা হয়েছে, কোন ব্যক্তি জীবনে চার হাজারবার বিসমিল্লাহ শরিফ পাঠ করেছে এমন সাক্ষ্য তার আমলনামায় উল্লেখ থাকলে কেয়ামতের ময়দানে সে আল্লাহর আরশের নিচে স্থান পাবে।
রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠকারী কেয়ামতের দিন আল্লাহর রহমতের মধ্যে ডুবে যাবে। তাই রাসূল (সা.) বেশি বেশি বিসমিল্লাহ বলতেন। বিসমিল্লাহয় রয়েছে পরম করুণাময়ের অশেষ বরকত। খাবার শুরুতে, কোথাও যাবার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগে, বাসস্থান ও অফিসে ঢোকার সময়, কাজ শুরুর আগে এবং লেখাপড়া শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা উচিত।
কিন্তু তাই বলে, কোন হারাম কিংবা নিষিদ্ধ কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া জায়েজ নেই। ইসলামী শরিয়তে শব্দভেদে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ ব্যবহারের পদ্ধতি শেখানো হয়েছে। এ ছাড়াও ওজু-নামাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়তে হয়। আর কোন প্রাণী বিসমিল্লাহ ছাড়া জবাই করা হলে তা ভক্ষণ করা বৈধ নয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যেসব প্রাণীর ওপর আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি, তোমরা সেগুলো ভক্ষণ করো না’- (সুরা আনআম : ১২১)।
হানাফি ও মালেকি মাজহাব মতে, জীবজন্তু শিকারের আগেও বিসমিল্লাহ পড়তে হয়। খাওয়ার শুরুতে পুরো বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নাত। তায়াম্মুমের শুরুতে বিসমিল্লাহ পাঠ করা সুন্নাত। এ ছাড়াও কোরআন পাঠের সময়, যানবাহনে আরোহনের সময়, ঘরে ও মসজিদে প্রবেশের সময় কিংবা বের হওয়ার সময়, বাতি প্রজ্বলিত করার সময়, বাতি নেভানোর সময়, প্রাকৃতিক ও বৈধভাবে জৈবিক চাহিদা পূরণের সময়, মিম্বরে আরোহনের সময়, কোন পাত্র ঢেকে রাখার সময়, লিখিত ও গ্রন্থিত যেকোন কাগজের শুরুতে ও মৃতদের কবরস্থ করার সময় বিসমিল্লাহ পড়া হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এ বিষয়ে মূলনীতি হলো, প্রত্যেক ভালো কাজই বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করতে হবে। (আল মওসুআতুল ফিক্বহিয়্যাহ আল কুয়েতিয়্যাহ, হরফুল ‘বা’, ‘বাসমালাহ’)।
Alhamdullah onk onk vlo lagcca..