আয়াতুল কুরসী
রমজান মাস অনেক রহমতের এক মাস। মুমিন বান্দারা এই মাসে চেষ্টা করে বেশি বেশি ইবাদাতের মাধ্যমে নিজেদের গুনাহ মাফ করাতে। আল্লাহও রমজানে বান্দার ইবাদাত দ্রুত কবুল করেন। রমজানের ইবাদাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফজিলতময় হচ্ছে কুরআন শরীফ তেলোয়াত।
পবিত্র কুরআনের ৬৬৬৬ আয়াতের মধ্যে সূরা বাকারায় একটি লম্বা আয়াত আছে যা “আয়াতুল কুরসী” নামে পরিচিত। এই আয়াত হচ্ছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতময়।
আজকে এই আয়াতের মাহাত্ম্য সম্পর্কে জেনে নেয়া যাকঃ
আয়াতুল কুরসী এমন এক আয়াত যেখানে এমনভাবে আল্লাহর একত্ববাদের কথা ফুটে উঠেছে, যার সামনে অন্য কোন আয়াত তার সমকক্ষ হতে পারে না। মহান আল্লাহর পবিত্র স্বত্ত্বা যাবতীয় কামালাত দ্বারা ভূষিত এবং যাবতীয় ত্রুটি ও দুর্বলতা থেকে পাক ও পবিত্র- এ মহা সত্যটি আয়াতুল কুরসীতে সুন্দরভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। তাই এ আয়াতখানি মহান আল্লাহর একাত্মবাদ ও কামালাতের চরম প্রকাশ এবং অতুলনীয়ও বটে।
• হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত যে, হযরত রাসুল পাক বলেছেন, প্রত্যেক বস্তুর একটি শীর্ষস্থান থাকে। পবিত্র কুরআনের শীর্ষস্থান হলো সূরা বাকারা আর এই সূরায় এমন একটি আয়াত বিদ্যমান, যা পবিত্র কুরআনের সমস্ত আয়াতের মধ্যে শীর্ষস্থান, উহা হল আয়াতুল কুরসি (তিরমিজী শরীফ)।
• যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাজের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে তার জন্য একমাত্র মওত ব্যতীত বেহেশতে প্রবেশ করার অন্য কোন বাঁধা থাকবে না এবং যথারীতি আয়াতুল কুরসী ঐ ব্যক্তিই পাঠ করে থাকে যে ব্যক্তি সৎ ও কল্যাণকামী এবং ইবাদাত গোজার। ( বায়হাকী শরীফ)
• যে ব্যক্তি শয়নকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করে আল্লাহ পাক তাকে, তার প্রতিবেশীকে ও তার প্রতিবেশীর প্রতিবেশীকে এবং তাদের আশপাশের সকল বসবাসকারী লোকদেরকে সহীহ সালামত ও নিরাপদে রাখেন (বায়হাকী শরীফ)
• রাসূল পাকের বাণী, যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসী ভোরে অর্থাৎ বাদ ফজর পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিবাদ থেকে নাজাত পাবে। অপরদিকে সন্ধ্যায় পাঠ করলে সকাল অর্থাৎ ফজর পর্যন্ত বিবাদ হতে মুক্তি পাবে (তিরমিজী শরীফ ২/১১৫)
• প্রত্যেক নামজের পর চৌদ্দবার আয়াতুল কুরসী পাঠ করলে যাবতীয় মসিবত ও অপছন্দনীয় কাজ থেকে মুক্তি লাভ হয়।
• নিয়মিত আয়াতুল কুরসী পাঠ করলে জীন-ভূতের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
• অশুভ ও মারাত্মক খাব থেকে বাঁচার জন্য শয়নকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা এক বিরাট আশ্চর্য তদবির।
• কোন কাজে রওয়ানা হওয়ার সময় এ আয়াত পাঠ করে প্রথমে বাম পা ফেলবে, সে কাজে অবশ্যই সুফল পাবে।
• রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের সময় হযরত আজরাইল আলাইহিস সালাম বলেছিলেন যে, আপনার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি প্রতি ফরয নামাযের পর একবার আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে আমি তার রূহ অতি সহজে কবয করব।
• আয়াতুল কুরসী পাঠকারীকে আল্লাহ নিজে তত্ত্বাবধান করেন।
• আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি প্রতি ফরয সালাত শেষে আয়াতুল কুরসী পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোন কিছু বাধা হবে না।”[সহীহ আল জামে]
আয়াতুল কুরসীর বাংলা অর্থঃ
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
ইবনু কাছীর বলেন, সঠিক কথা এই যে, কুরসী ও আরশ পৃথক বস্তুত এবং আরশ কুরসী হতে বড়, বিভিন্ন হাদীস ও আছার থেকে যা প্রমাণিত হয় (ঐ, তাফসীর)। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, কুরসীর তুলনায় সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী ময়দানে পড়ে থাকা একটি ছোট লোহার বেড়ীর ন্যায়। আরশের তুলনায় কুরসী একই রূপ ছোট হিসাবে গণ্য।- ইবনু কাছীর, তাফসীর বাকারাহ (২/২৫৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৯)।