খোশ আমদেদ মাহে রমজান।
মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাস রমজান। আল্লাহ এই মাসে আমাদের বেশি বেশি ইবাদাতের নির্দেশ দিয়েছেন। এই মাস বান্দার গুনাহ মাফের শ্রেষ্ঠ মাস বলে বিবেচিত। এই মাসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কোন বিকল্প নেই। সেই সাথে যত খুশি নফল ইবাদাত।
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ কিংবা নফল নামাজ- সব নামাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক সূরা হচ্ছে “সূরা ফাতিহা”। কুরআনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সূরা হচ্ছে সূরা ফাতিহা। কেননা এই সূরা ছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ অসম্পূর্ণ। দৈনিক নামাজে এই সূরা সম্পৃক্ত। আজকে আলোচনা হবে “সূরা ফাতিহার” মাহাত্ম্য নিয়ে।
সূরা ফাতিহা
সূরা ফাতিহা বিরাট তাৎপর্যপূর্ণ একটি সূরা। এর আমল ও উপকারিতা অনেক অনেক। নবী করীম (সঃ) ইরশাদ করেছেন, কোন ব্যক্তি শয়নের সময় সূরা ফাতিহাকে যদি সূরা ইখলাস, সূরা নাস এবং সূরা ফালাকসহ পাঠ করে নিদ্রায় যায়, তা হলে মৃত্যু ছাড়া সর্বপ্রকার বিপদ-আপদ থেকে সে নিরাপদে থাকবে। নবী করীম (সঃ)আরও বলেছেন, সূরা ফাতিহা হচ্ছে উম্মুল কুরআন অর্থাৎ কুরআনের জননী। এটি সর্বপ্রকার ব্যথা-বেদনা ও রোগ-ব্যাধির জন্য এক অমোঘ আরোগ্যকারী। (আদি ও আসল সহীহ- নেয়ামুল কুরআন)
আল কুরআন নাজিল হওয়ার পরে সূরা ফাতিহা হচ্ছে প্রথম সূরা যার সম্পূর্ণ আয়াত একসঙ্গে নাজিল হয়েছিল। সূরা ফাতিহার পূর্বে বিচ্ছিন্ন কিছু আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কোন সূরা অবতীর্ণ হয়নি। সেদিক থেকেও এই সূরা অনেক মাহাত্ম্য বহন করে। ফাতিহা নামকরণের কারণ হলো- ফাতিহা অর্থ উন্মোচনকারী। যেহেতু সূরা ফাতিহা কুরআনুল কারীমের শুরুতেই অবস্থিত এবং তার মাধ্যমেই কুরআনুল কারীমকে উন্মোচন করা হয়, তাই একে ফাতিহা বলে নামকরণ করা হয়েছে। একে কুরআনের মূলও বলা হয়েছে।
নবী কারীম (সঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফাতিহাতুল কিতাব বা সূরা ফাতিহা আল্লাহতায়ালা আমাকে আরশের নিচ হতে দান করেছেন। হযরত জিব্রাঈল (আঃ) একদা রাসুলে কারীম (সঃ) কে বলেছেন যে, আল্লাহতায়ালা আপনাকে দুটি নূর দান করেছেন, যা ইতিপূর্বে অন্য কোন পয়গম্বরকে দান করা হয়নি। এর একটি সূরা ফাতিহা আর অন্যটি সূরা বাকারাহ। (মুসলিম শরীফ: ৮০৬)
প্রতি নামাজের প্রতি রাকআতে এ সূরাটি পাঠ করা হয় বলে একে “সুরাতুল ছালাত” অর্থাৎ নামাজের সূরাও বলা হয়ে থাকে।
সূরা ফাতিহায় সাতখানি আয়াতে কারীমা রয়েছে। এই সূরা প্রত্যেক সালাতের প্রত্যেক রাক’আতে অবশ্যই পাঠ করতে হয়। যে কারণে একে বারবার পঠিত সাত আয়াত বলা হয়। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে: (হে রসূল) আর আমি তো আপনাকে দিয়েছি সাত আয়াত যা পুনঃপুনঃ আবৃত্তি হয় এবং দিয়েছি মহান কুরআন (সূরা হিজর : আয়াত ৮৭)
সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমিন বলতেন। যে কারণে এই সূরাখানি পড়ে আমিন বলতে হয়। আমিন অর্থ হচ্ছে কবুল করো।
সূরা ফাতিহার অনেক মাহাত্ম্য রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: হযরত ইমাম জাফর সাদিক (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, ৪০ বার বিসমিল্লাহসহ সূরা ফাতিহা পাঠ করে পানিতে ফুঁক দিয়ে সে পানি জ্বরাক্রান্ত কিংবা কঠিন রোগাক্রান্ত রোগীর চোখে-মুখে ছিটিয়ে দিলে আল্লাহর রহমতে রোগ নিরাময় হয়। যিনি এই ফুঁক দেবেন তাকে অবশ্যই শুদ্ধাচারী আমলদার কামিল ব্যক্তি হতে হবে। এছাড়াও কঠিন দুরারোগ্য অসুখে সূরা ফাতিহায় শিফা রয়েছে। এই সূরা তিলাওয়াত করলে সমগ্র কুরআন মাজিদের দুই-তৃতীয়াংশ সওয়াব পাওয়া যায়। এই সূরার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে বান্দা কী পদ্ধতিতে চাইবে বা দু’আ করবে, তা শিখিয়ে দেয়া হয়েছে।
যে ব্যক্তি নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করল না, তার সালাত অপূর্ণাঙ্গ। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ কথাটি তিনবার বলেছেন। (মিশকাত : ৮২৩)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা সূরা ফাতিহা পড়। কোন বান্দা যখন বলে, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বি আলআমিন, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। যখন বলে, আর রহমানির রহীম, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করেছে। বান্দা যখন বলে, মালিকি ইয়াওমিদ্দিন। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করেছে। বান্দা যখন বলে, ইয়্যাকানা’বুদু ওয়া ইয়্যা কানাস্তাইন, আল্লাহ বলেন, এ হচ্ছে আমার ও আমার বান্দার মাঝের কথা। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। বান্দা যখন বলে, ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম.. (শেষ পর্যন্ত)। আল্লাহ বলেন, এসব হচ্ছে আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। (মুসলিম শরীফ : ৩৯৫)
সূরা ফাতিহার সর্বাধিক পরিচিত নাম ‘সূরাতুল ফাতিহা’। তারপরও সূরা ফাতিহার স্থান, মর্যাদা, বিষয়বস্তু, প্রতিপাদ্য বিষয় ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য রেখে এর বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়েছে এবং প্রত্যেক নামের সাথেই সূরাটির সামঞ্জস্য বিদ্যমান। এই সূরাটির ফযিলত ও গুরুত্ব অনেক। আল্লাহ যেন আমাদের সকলকেই সূরা ফাতিহার প্রতি আমল করে সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করেন (আমিন)।