আচ্ছা একটা বিষয় লক্ষ্য করেছেন “happiness ” বা সুখ বিষয় টা কত আপেক্ষিক , সারা মাস খাঁটার পর বেতন পাবার দিনটায় শুধু মনে হয় ত্রিশ দিন কষ্ট করেছি শুধু এই দিনটার জন্য।সুখ একটা মুহূর্ত, এটা একটা বিশেষ মূহুর্তের নাম তা ঠিক কখন আসে কার হাত ধরে আসে তা বলা যায় না।
প্রত্যেকটি সফল মানুষের সফলতার পেছনেই রয়েছে ব্যর্থতার নির্মম কোনো গল্প। সংগ্রাম না করে জীবনে কেউ কখনো বড় হতে পারেনি। পৃথিবীর সেরা ধনীদের জীবনকাহিনী ঘাঁটলেও দেখা যাবে কোনো না কোনো এক সময়ে করে আসা কঠিন জীবন সংগ্রামের গল্প। তাদের অতীতের এসব গল্প যেমন বাকিদের জন্য শিক্ষামূলক ঠিক তেমনি অনুপ্রেরণাদায়ক।
ক্রিস গার্ডনার এমনই একজন মানুষ। তিনি পেশায় একজন আমেরিকান ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, লেখক এবং মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনে এ অবস্থানে পৌঁছাতে তাকেও কম সংগ্রাম করতে হয়নি। তার জীবনের সত্য এবং অনুপ্রেরণা যোগানোর মতো ঘটনার উপর ভিত্তি করেই নির্মিত হয়েছে হলিউড মুভি দ্য পারসুট অব হ্যাপিনেস। মুভিটিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন হলিউড অভিনেতা উইল স্মিথ এবং গার্ডনারের শিশু পুত্র ক্রিস জুনিয়র চরিত্রে অভিনয় করেছে উইল স্মিথের পুত্র জ্যাডেন স্মিথ। চলুন জেনে আসা যাক এ মুভিটির আদ্যোপান্ত।
কাহিনী সংক্ষেপ
১৯৮১ সালে স্যান ফ্রান্সিসকোর সেলসম্যান ক্রিস গার্ডনার তার সারা জীবনের সঞ্চয় এক নতুন ব্যবসায় ব্যয় করে ফেলে। সে নিউ ইয়র্ক শহরে ডাক্তারদের জন্য বহনযোগ্য স্ক্যানার বিক্রির ব্যবসায় নেমে পড়ে। এ স্ক্যানার মানুষের হাড়ের ঘনত্ব পরিমাপ করতে সক্ষম। তার মতে, এ স্ক্যানার সাধারণ এক্স-রে স্ক্যানারের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। তবে এ ব্যবসায় সে খুব বেশি সুবিধা করে উঠতে পারে না।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাকে খালি হাতে ফেরত আসতে হয় যা তার ইতোমধ্যে অভাব অনটনে থাকা জীবনকে আরো জটিল করে তোলে। যদিও সে অনেকগুলো স্ক্যানার বিক্রি করতে সক্ষম হয় কিন্তু তাদের মধ্যে সময়ের ব্যবধান অনেক বেশি থাকায় খুব একটা লাভ সে করতে পারে না। হতাশা এবং দারিদ্র্য তার ব্যক্তিগত জীবনেও বেশ প্রভাব ফেলতে থাকে। তার স্ত্রী লিন্ডা যে কিনা একটি হোটেলে পরিচারিকা হিসেবে কাজ করে, সে ক্রিসের থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। সংসারের টানাপোড়ন তাদের মধ্যেকার তিক্ত সম্পর্কের আগুনে আরো ঘি ঢেলে দেয়।
শিশু সন্তান ক্রিস জুনিয়রের ভরণপোষণের দায়িত্ব এসে পরে তার উপর। কিন্ত প্রতিনিয়ত টানাপোড়েনের মধ্যে থাকা ক্রিস আপ্রাণ চেষ্টা করে যায় সন্তানকে অভাব অনটনের বিন্দুমাত্র বুঝতে না দেয়ার। কিন্তু তারপরেও একসময় অভাব অনটনে সে দেউলিয়া হয়ে যায়। ভিক্ষুক এবং বাস্তুহারাদের সাথেও এক সময় আশ্রয়কেন্দ্রে রাত্রীযাপন করতে হয় তাকে এবং তার সন্তানকে।
একদিন এক সেয়ার কোম্পানির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লাল গাড়ি নজর কারলো তার, গাড়ির মালিককে ক্রিস জিজ্ঞেস করল- I really want to know, what you do and how to do it?
এবং এভাবেই তার সাথে পরিচয় হয় জে টুইসেল নামক এক শেয়ার ব্যবসায়ীর সাথে। টুইসেল আমেরিকার বিখ্যাত শেয়ার ব্যবসার কোম্পানি ডিন উইটার রেনল্ডসের একজন কর্মকর্তা। তার সাথে ভাগ্যক্রমে একদিন একই ট্যাক্সিতে যাতায়াতের সুযোগ হয় ক্রিস গার্ডনারের। তার বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হয়ে টুইসেল তাকে তার কোম্পানিতে একটি সুযোগ দিতে ইচ্ছুক হয়।
কিন্তু ভাগ্য যেন কোনোক্রমেই তার সহায় হচ্ছিল না। ক্রিস কি শেষ পর্যন্ত পারে চাকরিটির সুযোগ লুফে নিতে, নাকি তার জন্য অপেক্ষা করছে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস? কী করে নিঃস্ব অবস্থায় আশ্রয়কেন্দ্রে জীবন পার করা ক্রিস আমেরিকার সবচেয়ে সফল ব্যবসায়ীদের একজন হয়ে ওঠে? এসব প্রশ্নের জবাব পেতে আপনাদের দেখতে হবে এ মুভিটি।
নির্মাণ এবং চিত্রনাট্য
দ্য পারসুট অব হ্যাপিনেস মুভিটি পরিচালনা করেছেন ইটালিয়ান পরিচালক গ্যাব্রিয়েল মুচিনো। মুভিটিতে মূল চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাতেও নাম লিখিয়েছিলেন অভিনেতা উইল স্মিথ। পরিচালক অত্যন্ত সুন্দরভাবে বড় পর্দায় গার্ডনারের জীবনী ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
২০০২ সালে টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারের পর গার্ডনার দর্শকদের কাছে থেকে ব্যাপক সাড়া পান তার আত্মজীবনী নিয়ে হলিউডি মুভি বানানোর জন্য। গার্ডনার ২০০৬ সালে একটি বইও লেখেন যা মুভিটির চিত্রনাট্য তৈরিতে অনেকাংশে ব্যবহার করা হয়।
একটি সাদামাটা কাহিনীকে অত্যন্ত আবেগঘনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে মুভিটি চিত্রিনাট্যে। সাধারণত মুভিগুলোতে দেখা যায়, অভাব অনটনে থাকা কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোর জীবন নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। রাতারাতি তারা বড়লোক হয়ে যায়। অনেকটা সাফল্য নিজ থেকে এসেই ধরা দেয় তাদের কাছে। কিন্তু এ মুভিটির ক্ষেত্রে গল্প এবং চিত্রনাট্য উভয়ই বেশ বাস্তবধর্মী। এছাড়া মুভিটি আর্থিক কষ্ট ছাড়াও আরো একটি বিষয় তুলে ধরেছে। তা হলো পিতা ও তার শিশু পুত্রের মধ্যকার ভালোবাসা এবং তাদের দৈনন্দিন মিষ্টি মধুর সম্পর্ক। সব মিলিয়ে মুভিটিতে আবেগঘন মুহূর্তের কোনো অংশে কমতি নেই।
অভিনয় এবং রেটিং
মুভিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছেন হলিউড অভিনেতা এবং তারকা উইল স্মিথ। এছাড়া বাবা উইলের সাথে এ মুভিতে প্রথমবারের মতো বড় পর্দায় দেখা যায় পুত্র জ্যাডেন স্মিথকে। ২০১০ সালে দ্য কারাটে কিড মুভিটির মাধ্যমে হলিউডে নাম লেখানোর পূর্বে জ্যাডেনকে ভক্তরা এ মুভির ছোট্ট শিশুটি হিসেবে মনে রেখেছিল।
এছাড়া উইল স্মিথের স্ত্রী চরিত্রে আমরা দেখতে পাই অভিনেত্রী থ্যানডি নিউটনকে। বর্তমানে তিনি ওয়েস্টওয়ার্ল্ড টিভি সিরিজের জন্য বেশ পরিচিত হলেও তৎকালীন সময়ে তিনি খুব একটা পরিচিত মুখ ছিলেন না। মুভির শিল্পীদের মধ্যে উইল এবং জ্যাডেন স্মিথের দৃশ্যগুলো ছিল সবচেয়ে মজার, অনুপ্রেরণাদায়ক এবং একই সাথে আবেগে পরিপূর্ণ। মুভিটির জন্য স্মিথ সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কার এবং গোল্ডেন গ্লোব উভয় আ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন পান।
মুভিটি দর্শক এবং সমালোচক উভয়ের দ্বারা ব্যাপক প্রশংসিত হয় এবং মুক্তির পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮.০ রেটিং নিয়ে আইএমডিবির শীর্ষ ১০০ মুভির তালিকায় স্থান দখল করে আছে। মুভিটির অস্কার এবং গোল্ডেন গ্লোবে মনোনয়ন মুভিটির জনপ্রিয়তাই নির্দেশ করে।
কেন দেখবেন এ মুভিটি।
দ্য পারসুট অব হ্যাপিনেস জীবনযুদ্ধে জয়ী এক মানুষের গল্প। তার চেয়ে বড় কথা এটি এক বাবা এবং তার পুত্রের গল্প। গল্পের টান টান উত্তেজনা ও ক্রিসের বারবার জিতে জিতে হেরে যাওয়া,তবু হাল না ছাড়া, দাঁত দিয়া ঠোঁট কামড়ে চেষ্টা করে যাওয়ার গল্পটা নিঃসন্দেহে একটা মানুষের মনোবল দৃঢ় করতে পারে।
ক্রিস মানুষটার ব্যাক্তিত্বে একটা অসম্ভব বিনয় লক্ষ্য করা যায়। মাত্র ফাইব বাকস্ যা পরিশেষে তার ভাগ্য পাল্টে দিল। কীভাবে? জানতে হলে দেখতে হবে,The Pursuit of Happyness .